১।
ডুবোপাহাড়ের নির্জনতায়
আমরা
ভালোবাসতে চেয়েছিলাম।
ছিপছিপে রোদে বসে
কিশোরীর মত
আনকোরা
হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম।
বদলে
প্রোজেকের সকালগুলো
ক্রমেই গড়িয়ে যাচ্ছে
থেরাপি সর্বস্ব দুপুরের দিকে।
নৌকা বিষয়ক প্রস্তাবনা
থেকে আমরা
গড়িয়ে যাচ্ছি
ভয়ঙ্কর শান্ত পাথরে।
ভুরভুরে বমনেচ্ছা জুড়ে
ডালপালা মেলছে
আখাম্বা আকাশী মিনার।
আর গাঢ় হয়ে আসা জ্যুকবক্সে
বিপজ্জনক ভাবে
বেজে উঠছে
'ইউ বেটার রান রান রান
ফাস্টার দ্যান মাই বুলেট'
২।
ভেপার লাইট ঠিক
ততক্ষণ মায়াবী
যতক্ষণ জাফরী আঁটা জানলায়
অপেক্ষারত
তৃতীয় কেউ
আমাদের স্নেহগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছে।
অথচ
ঝলমলে তুষারপাতে
উদাসীন এয়ারগান
আমাদের ঘুমোতে দিচ্ছে না।
ঠোঁট থেকে ঠোঁট বরাবর
সামান্য রাস্তাটুকু
হেঁটে যেতে যেতে
আমরা বারবার কেঁদে ফেলছি।
‘কোথায় আমাদের র চা এর কাপ?’
আপেলবাগানে
স্নিগ্ধ হয়ে উঠছেন দেবদূত।
দিনগুলো হেলাফেলায়
কেটে যাচ্ছে
য্যানো কোথাওই কোনো
২৪ রিল নেই
আর
মৃত কমরেডের চাউনীর মধ্যে
বারবার ঝলসে উঠছে
উত্তেজক একটা ক্যামেরা।
৩।
কতদিন ঘুমোই নি আমরা?
কড়িকাঠ চুঁইয়ে অন্ধকার নেমে আসছে।
জানলা চুঁইয়ে নেমে আসছে
অলৌকিক বিপন্নতাবোধ।
প্লাঁসেৎ প্লাঁসেৎ বলে
পর্দা দুলে উঠলো হাওয়ায়।
প্রফেসি প্রফেসি বলে
জাহাজ দুলে উঠলো হাওয়ায়।
আশ্চর্য ভয়ের গল্পের মধ্যে
আমরা শুধুই থম মেরে রইলাম
ঘন্টার পর ঘন্টা
আর
টলটলে একটা পিঁপড়ে
কাউকে কিচ্ছুটি না বলে
এইমাত্র হেঁটে গ্যালো
আলনার দিকে।
৪।
'আমরা কেউই আসলে নিরাপদ নই'
এইটুকু ভাবতেই
আমাদের সমস্ত মফস্বলবোধ
পিষে দিয়ে চলে যাচ্ছে
টকটকে লাল একটা ট্রাক।
এজেন্ট অরেঞ্জের ঘ্রাণে
স্নিগ্ধ হয়ে আসছে চরাচর।
মুহূর্মুহূ বেজে উঠছে
বিষাদঘন একটা সাইরেন।
বেজে উঠছে অলীক মৃত্যুসংবাদ।
আর আমরাও
উজ্জ্বল আরো উজ্জ্বল
হতে হতে হতে
মিশনারী স্কুলের গল্পে
ঢুকে পড়ছি।
৫।
তালু থেকে তালুতে
ছড়িয়ে যাচ্ছে তরল অসুখ।
ছড়িয়ে যাচ্ছে
মিশেলের অলিখিত মনোলগ।
একক প্রদর্শণীতে দাঁড়িয়ে
প্রৌঢ় মাইম শিল্পী
একা একাই বেদম ঘামছেন।
কোত্থাও কেউ নেই
অথচ নিদারুণ হাততালি তে
ম ম করে উঠছে গোটা হলঘর,
আর ফাঁকা গ্রীনরুমে
ছুরিকাঘাতের মত
নেমে আসছে
ঐশী আলো।
আমরা কি সার্কাস দেখতে অ্যাদ্দুর এসেছি তবে?
উত্তরে করিডোর শুধু
ফিসফিস করে উঠলো
'মিশেল...মিশেল....'
আর টুংটাং শব্দ তুলে আমরা
তলিয়ে গেলাম
নিদারুণ কার্পেটে।
৬।
একটার পর একটা সিনেমাহল
ঝনঝনিয়ে বন্ধ হয়ে আসছে।
আলবাট্রোসের সন্ধ্যের মধ্যে
গাঢ় হয়ে আসছে অপরাধবোধ।
শিক থেকে শিকে
লাফিয়ে নামছে
হুইসেলের অপূর্ব উপমা।
মোহময় টিকিটকাউন্টার জুড়ে
হুল্লোড়ের মত
দু তিনটে গোলাপী চিরকুট
লং শটের স্মৃতি ধরে রাখছে।
ধরে রাখছে
ছোড়দির আলতো রোদ্দুর।
আর আমরা তিনজন
সান্ধ্যশহরে
নিজেদের ডানা ছেঁটে
পা টিপে হাঁটছি
অদ্ভুতুড়ে থ্রিলারের মত
যাতে ফ্রেমগুলো আরো বেশী
দগদগে হয়ে ওঠে।
৭।
'বলো কে আমাদের সারিয়ে তুলবে তবে?'
এভাবেই ধীর লয়ে
আমাদের বুভুক্ষু মিছিলগুলো
বেঁকে যাচ্ছে
স্যানিটোরিয়ামের দিকে।
পায়ের ডিমের মত এক একটা সন্ধ্যে
তাদের প্রসারিত হাঁয়ে
টেনে নিচ্ছে
শব্দের প্রতিস্পর্ধা।
টডলার টাউনের দেওয়ালগুলো জুড়ে
কারা জানি এঁকে রাখছে
অশ্লীল সব গ্রাফিত্তি।
আর্কিটাইপাল অন্ধকার
গা ছমছমিয়ে
তার দুই বুক খুলে দিলো।
আর দেখুন সেই সুযোগে
বাদামী মেয়েটিও
বেগুনী হ্রদের জলে
পরখ করে নিচ্ছে
দু একটা আলগা হোঁচট....
মৎস্য বিষয়ক ব্যথাবোধ...
৮।
কদ্দুর পালাবো তবে আমরা?
ল্যুসি ল্যুসি বলে চিৎকার করতে করতে
এক একটা ঢেউ
সবুজ দরজায় এসে
সটান আছড়ে পড়ছে।
কোকো উপত্যকায় এসে
আছড়ে পড়ছে
হেডলাইটের মত রোদ।
'আমাদের কদ্দুর যাওয়ার কথা ছিল?'
এইটুকু শুনেই
কনিকাল টুপির সেই বৃদ্ধ
আমেন..আমেন বলে
বিড়বিড় করে উঠলেন
আর অনেক উপর দিয়ে
শোকসংবাদের মত
উড়ে গ্যালো
নিরুপম একটা জেট প্লেন।
৯।
তারে তারে ঝুলে রয়েছে
করুণ রূপক।
শার্সিতে শার্সিতে ফিরে আসছে
ঘ্যানঘ্যানে অন্তমিল।
এ বসন্তে কোথায় আর বেজে উঠবে
মেধাবী মল্লার?
আমাদের কোনো মিথ নেই,
মুক্তি নেই।
শুধু এই স্লো মোশনে হেঁটে যাওয়াটুকু।
ফ্রেমে ফ্রেমে ছিটকে যাচ্ছে
ক্লিশেতম উপমা।
আঙুল থেকে আঙুলে ছিটকাচ্ছে
চিটচিটে রক্তের দাগ।
অকালে বুড়িয়ে যাওয়া মেজ পিসি শুধু
আমাদের একটার পর একটা
ব্যর্থ কাপ্লেট
ভীষণ যত্ন নিয়ে
শোকেসে সাজিয়ে রাখছেন।
১০।
এভাবেই শট শেষ হয়।
দিনলিপি ঘন হয়ে আসে।
ঘন হয়ে আসে ক্রীম ও ক্রিসকস টেবিল।
কদ্দিন ধরে করুণ ঘুরপাকে
আমাদের যাবতীয় সেপ্টেম্বর
গোলারুটির মত পুড়ে যাচ্ছে
আমরা জানি না।
আলগোছে শুধুই ফুঁপিয়ে উঠছি।
চিবুক থেকে চিবুকে উড়ছে
পরিত্যক্ত কাঁচের বোতল...
রঙচঙে ছিপির সারল্য...
আর গুঁটিশুঁটি মেরে
সব কটা হলুদ খাম
ঢুকে পড়ছে
কষ্টের মত ভাস্বর
একটা খারাপ কবিতায়।
আমরা বাড়ী ফিরছি না।